আল্লাহর আইন পরিবর্তনকারী জালেম শাসক দ্বিতীয় প্রকারের প্রধান তাগুত হচ্ছে আল্লাহর আইন পরিবর্তনকারী জালেম শাসক । এর দলিল আল্লাহ তায়ালার বাণীঃ “আপনি কি তাদেরকে দেখেন নি, যারা দাবী করে যে, আপনার প্রতি যা নাযিল করা হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি তারা ঈমান আনয়ন করেছে। তারা বিরোধপূর্ণ বিষয়কে ফয়সালার জন্য তাগুতের দিকে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি তাকে (তাগুতকে) অমান্য করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।”(আন-নিসাঃ ৬০) আল্লাহ আমাদের একমাত্র রব। তিনি তাঁর কার্যাবলী, ক্ষমতা এবং কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে একক। যে কেউ আল্লাহর কার্যাবলী, ক্ষমতা এবং কর্তৃত্বের কোন একটি তাঁর নিজের জন্য দাবী করবে বা এরুপ কাজ করবে যেটা আল্লাহর অধিকার সে ত্বাগুতে পরিণত হবে। আল্লাহ সার্বভৌমত্বের একক অধিকারী, আল্লাহর এ কর্তৃত্বে কেউ বিন্দুমাত্র শরীক নেই। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেনঃ “যিনি আকাশ ও পৃথিবীর সার্বভৌমত্বের অধিকারী; তিনি কোন সন্তান গ্রহন করেননি; সার্বভৌমত্বে তাঁর কোন শরীক নেই । তিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেককে পরিমিত করেছেন যথাযথ অনুপাতে। ” (সূরা, ফোরকান-২৫:২) সার্বভৌমত্বের অধিকারী আল্লাহই একমাত্র আইন-বিধানদাতা। আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেনঃ “বিধান দেবার অধিকার আল্লাহরই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করো না। এটাই সরল পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না”। (সূরা, ইউসুফ-১২:৪০) আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেছেনঃ “জেনে রেখো সৃষ্টি এবং বিধান তাঁরই।” (সূরা, আরাফ -৭:৫৪) আল্লাহর বিধান দানের সার্বভৌম কর্তৃত্বে কেউই শরীক নেই। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেনঃ “সার্বভৌমত্বে তাঁর কোন শরীক নেই ।” (সূরা,ফোরকান-২৫:২) আল্লাহর আইন-বিধান কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেছেনঃ “আল্লাহ নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশকে পশ্চাতে নিক্ষেপকারী কেউ নেই। তিনি দ্রুত হিসাব গ্রহণ করেন”। (সূরা, রাদ-১৩:৪১) সুতরাং আল্লাহর আইন-বিধানদানের এ সার্বভৌম অধিকারের ক্ষেত্রে যে ব্যক্তিই সীমালংঘন করবে সে ত্বাগুতে পরিণত হবে। কারণ সে আল্লাহর খাস অধিকারের ক্ষেত্রে সীমালংঘন করেছে। কোরআনে আল্লাহ ফেরাউনকে ত্বাগুত বলেছেন। সে প্রকাশ্য নিজেকে ‘রব’ ঘোষণা করেছিলো তা কোরআন সুস্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরেছেঃ “দেশবাসীকে জড় করে সে ভাষণ দিলো, অতপর সে বললো, আমিই তোমাদের সবচেয়ে বড় ‘রব’।” (সূরা নাযিয়াত ৭৯: ২৩-২৪) এখন কথা হলো, ফেরাউন নিজেকে ‘রব’ বলতে কী বুঝিয়েছে? সে কি দাবী করেছিলো যে, সে আসমান যমীন সৃষ্টি করেছে,মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছে কিংবা পাহাড়-পর্বত যমীনের বুকে গেড়ে যমীনকে সে স্থিতিশীল করে রেখেছে? না, এমন দাবী সে কখনো করেনি। সে যদি এমন দাবী করতো তাহলে তার সংগী-সাথীরাই তাকে পাগল বলে উড়িয়ে দিতো। বরং সে নিজেও বিভিন্ন পূজা-পার্বনে অংশ নিতো। তারও অনেক ধরনের ইলাহ, মাবুদ বা উপাস্য ছিলো। কোরআন থেকেই এর প্রমাণ দেখে নিনঃ “ফেরাউনের জাতির নেতারা (ফেরাউনকে) বললো, আপনি কি মূসা ও তার দলবলকে রাজ্যে বিপর্যয় সৃষ্টির সুযোগ দিবেন আর তারা আপনাকে ও আপনার ইলাহদের এভাবে বর্জন করে চলবে?” (সূরা আরাফ ৭: ১২৭) দেখুন আয়াত সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করছে যে, তারও অনেক ইলাহ বা উপাস্য ছিলো। তাহলে তার ‘রব’ দাবী বলতে আসলে কী বুঝায়? রব বলে সে কী দাবী করেছিলো? সরাসরি আল্লাহর কালাম কোরআনই আমাদেরকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছে যে, ফেরাউনের দাবী ছিল সার্বভৌমত্বের দাবী। সারা পৃথিবীতে নয় তার দাবী ছিল কেবল মিশরের শাসন ক্ষমতার উপর নিরংকুশ আধিপত্যের দাবী। তার দাবী ছিলো মিশরের সাধারণ জনগণের জন্যে তার ইচ্ছানুযায়ী যেমন খুশী তেমন আইন-কানুন ও মূল্যবোধ নির্ধারণের ক্ষমতার দাবী। দেখুন কোরআন কী বলেছেঃ “ফেরাউন তার জাতির উদ্দেশ্যে (এক) ভাষণ দিলো। সে বললো, মিশরের সার্বভৌমত্ব কি আমার নয়? তোমরা কি দেখছো না যে, এই নদীগুলো আমার (রাজত্বের) অধীনেই বয়ে চলছে--------।” (সূরা যুখরুফ ৪৩:৫১) কোরআনের আয়াতগুলো এবং বাস্তব প্রেক্ষাপট যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে নিশ্চয়ই বুঝতে পারি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, চক্র বা যে কারো সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়া মানেই হলো তাকে বা তাদেরকে ‘রব’ বানিয়ে নেয়া। কারণ অন্য কারো সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়া মানেই হলো আল্লাহর সার্বভৌমত্ব অস্বীকার করে আইন-কানুন রচনা করার অধিকারসহ নিরংকুশ শাসন কর্তৃত্ব তাদের হাতে তুলে দেয়া। কোরআনের আলোকে মানুষ কিভাবে মানুষের ‘রব’ হয়ে যায় তা খতিয়ে দেখতে গিয়ে মানব জাতির অতীত ইতিহাসেই শুধু নয় বর্তমান বিশ্বেও অসংখ্য (মিথ্যা) রবের পদচারণা আমরা সচরাচর দেখতে পাই। তবে তারা শুধু মুখ দিয়ে বলে না যে, আমরা তোমাদের ‘রব’। বর্তমানে যারা এ ত্বাগুত শ্রেনীর অন্তর্ভূক্ত- যেসব জালেম শাসকেরা আল্লাহর আইনকে বাদ দিয়ে নিজেরা আইন দিচ্ছে । যেমন আল্লাহ চুরির ক্ষেত্রে বিধান দিয়েছেনঃ “যে পুরুষ চুরি করে এবং যে নারী চুরি করে তাদের হাত কেটে দাও তাদের কৃতকর্মের সাজা হিসেবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে হুশিয়ারী। আল্লাহ পরাক্রান্ত, জ্ঞানময়।” (সূরা, মায়েদা-৫:৩৮) অথচ বর্তমানে এসব শাসকরা বিধান দিয়েছে চুরির শাস্তি হচ্ছে জেল বা জরিমানা। এমনিভাবে অন্যান্য অপরাধের ক্ষেত্রে দেখুন ডাকাতির দন্ড, ব্যভিচারের দন্ড, সন্ত্রাস দমন আইন, বিবাহ বিধিসহ আরো অনেক বিষয়ে আল্লাহ তা’আলা যে বিধান আল-কোরআনের মাধ্যমে ঘোষণা করেছেন, তা বাদ দিয়ে তারা নিজেদের মনমতো দন্ড বিধি বা আইন তৈরী করে নিয়েছে। যেসব শাসকেরা আল্লাহর হালাল-হারামের বিধানকে পরিবর্তন করেছে তারাও তাগুতের অন্তর্ভূক্ত। তারা নিজেদের মিথ্যা রবের আসনে বসিয়েছে। তারা কিভাবে তাদেরকে আল্লাহর পরিবর্তে ‘রব’বানিয়ে নিয়েছিলো তা আমরা সরাসরি আল্লাহর রাসূল (সঃ)-এর করা এই আয়াতের তাফসীরের আলোকে একেবারে স্পষ্ট করে বুঝতে পারবো ইনশাআল্লাহ। তিরমিযীতে উদ্ধৃত হাদিসে হযরত আদী ইবনে হাতেম (রাঃ) বলেন, আমি একবার রাসূলুলাহ (সঃ) এর কাছে এসে দেখলাম তিনি সূরা তওবার এই আয়াতটি তেলাওয়াত করছিলেনঃ “তারা তাদের সন্নাসী ও ধর্মযাজক (পীর, নেতৃস্থানীয় লোকদেরকে) আল্লাহর পরিবর্তে ‘রব’বানিয়ে নিয়েছে-----।” (সূরা তওবা ৯:৩১) অতপর রাসূল (সাঃ) বলেন তোমরা শোনো তারা তাদেরকে (শাব্দিক অর্থে) পূজা/ উপাসনা করতো না, কিন্তু তারা যখন মনগড়া ভাবে কোনো কিছুকে বৈধ ঘোষণা করতো, জনগণ তা মেনে নিতো, আর যখন কোনো কিছুকে অবৈধ ঘোষণা করতো তখন তারা তা অবৈধ বলে মেনে নিতো। তাফসীরে ইবনে কাসীরে ইমাম আহমদ তিরমিযী ও ইবনে জারীরের সূত্রে আদী ইবনে হাতেম (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে, তার কাছে ইসলামের দাওয়াত আসার পরে প্রথমে তিনি সিরিয়ায় পালিয়ে গিয়েছিলেন, পরে যখন রাসূল (সঃ) এর কাছে তিনি এলেন তখন তার গলায় ক্রুশ ঝুলানো ছিলো। তখন রাসূল (সঃ) উল্লেখিত আয়াতটি পড়ছিলেন। হযরত আদী (রাঃ) বলেন,আহলে কিতাবরা (ইহুদী ও খৃষ্টানরা) তো আলেম/ দরবেশদের (তথা নেতাদের) পূজা উপাসনা করতো না! রাসূল (সঃ) বললেন, তা সত্য। তবে তারা মনমতো কোনো কিছুকে বৈধ কিংবা অবৈধ ঘোষণা করলে জনগণ তা নির্বিচারে মেনে নিতো। এটাই তাদের পূজা-উপাসনা/ ইবাদত। বর্তমান তাগুতী (সীমালঙ্ঘনকারী) সরকার ব্যবস্থায় এর উদাহরণ দেখুনঃ মদ, জুয়া, লটারী, সুদ, বেপর্দা, নারী নেতৃত্ব,বেশ্যাবৃত্তি (ব্যভিচার) এমন আরো অসংখ্য বিষয় রয়েছে, যেগুলো আল্লাহ তা’আলা কঠোর ভাবে অবৈধ ঘোষণা করেছেন,পক্ষান্তরে, তারা এগুলোকে বৈধতার সার্টিফিকেট দিয়েছে।
http://www.healthprose.org/ http://www.handlestresshelp.com/ https://www.hillsfarmacy.com/ http://www.ambienonlinebuycheap.com/